কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল | লুইপাদের চর্যা ১
(ads1)
পয়েন্ট দেখুন(toc)
মূলপদ
॥ রাগ পটমঞ্জরী—লুইপাদানাম্ ॥
কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পইঠো কাল॥ ধ্রু॥
দিঢ় করিঅ মহাসুহ পরিমাণ।
লুই ভণই গুরু পুচ্ছিঅ জাণ। ধ্রু॥
সঅল স [মা] হিঅ কাহি করিঅই।
সুখদুখেতেঁ নিচিত মরিআই॥ ধ্রু॥
এড়িএউ ছান্দক বান্ধ করণক পাটের আস।
সুন্নপাখ ভিড়ি লাহু রে পাস॥ ধ্রু॥
ভণই লুই আম্হে ঝাণে দিঠা।
ধমণ চমণ বেণি পিণ্ডি বইঠা॥ ধ্রু॥
ভাবানুবাদ
কায়ারূপ তরুবর, পাঁচ তার ডাল।
চঞ্চল চিত-মাঝে পশে আসি কাল।।
দৃঢ় করি মহাসুখ কর পরিমাণ।
লুই ভণে—গুরুকে পুছিয়া ইহা জান ৷
সকল সমাধি দ্বারা কিবা করা যায়।
সুখদুঃখে নিশ্চিত মরিবেই হায়।।
ছন্দের বন্ধন এড় করণের (পারিপাট্য) আশ।
শূন্যতা পক্ষের দিকে লহ তুমি পাশ ।
লুই বলে—ইহা আমি ধ্যানে দেখিয়াছি।
ধমণ চমণ দুই পীড়িতে বসেছি।।
বাচ্যার্থ বা আক্ষরিক অর্থ
১-২ কায় [রূপ] তরুবর। পাঁচটি [তার] ডাল। চঞ্চল চিত্তে কাল প্রবিষ্ট হয়েছে।
৩-৪ দৃঢ় করে মহাসুখ পরিমাণ কর। লুই ভনে, গুরুকে পুছে (=জিজ্ঞাসা করে) জান।
৫-৬ সমাধি-সকল দিয়ে কী হবে, সুখদুঃখে নিশ্চিতভাবে মরতেই হবে (অর্থাৎ ধ্যান-সমাধিতে সুখদুঃখের নিশ্চিত নিবৃত্তি নেই)।
৭-৮ [অতএব] ছন্দের (=বাসনার) বন্ধন (ও) করণের (=ইন্দ্রিয়ের) পটুত্বের আশা এড়াও (অর্থাৎ ত্যাগ কর)। শূন্যতা পক্ষের দিকে ভিড়ে পাশ নাও (ফের)।
৯-১০, লুই ভনে, আমি ধ্যানে (পাঠান্তরে ‘ইশারায় ) [ এই যুগনদ্ধ রূপ] দেখেছি, ধমন-চমন (=নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ) [-রূপ] দুই পিঁড়িতে বসেছি। ধ্রু=ধ্রুবপদ।
(ads2)
গূঢ়ার্থব্যাখ্যা ৷৷ আলোচনা
গানটিকে টীকাকার মুনিদত্ত ‘মহারাগনয়চর্যা' অর্থাৎ মহাঅনুরাগের পদ্ধতির রূপে উল্লেখ করেছেন। সহজসাধনার পদ্ধতিগত ইঙ্গিত থাকাতেই বোধ হয় এই নামকরণ। এই গানে সাধনপদ্ধতি ছাড়াও সাধকদের দার্শনিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। পদকর্তা লুই বলেছেন যে, আমাদের এই দেহ পঞ্চশাখাবিশিষ্ট তরুর মতো রূপ-বেদনা-সংজ্ঞা-সংস্কার বিজ্ঞান নামক পঞ্চকায়ের সমবায়ে গঠিত। আমাদের মন প্রকৃতি-আভাস দোষে নিয়ত চঞ্চল, মনের এই চঞ্চল অবস্থা থেকেই আমাদের কাল-বোধ জন্মে এবং কাল-বোধ থেকেই প্রবৃত্তিমূলক ভববোধ বা সংসার-জ্ঞানের উৎপত্তি।
এই চঞ্চল চিত্তকে নিঃস্বভাবীকৃত করতে হলে তাকে মহাসুখের মধ্যে বিলীন করতে হবে এবং এই সাধনায় গুরুর নির্দেশ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিবিধ ধ্যান-সমাধির দ্বারা কিছু লাভ হয় না, কেননা এসব সত্ত্বেও সংসারের সুখদুঃখ ভোগ করতে হয় এবং মৃত্যুও সুনিশ্চিত। অতএব সর্ববিধ ইন্দ্রিয়ভোগের আশা পরিহার করে শূন্যতার পক্ষ তথা বাসনানিবৃত্তির পথ অবলম্বন করতে হবে। শুধু প্রবৃত্তিমূলক ভববোধেও সহজানন্দ নেই, শুধু নিবৃত্তিমূলক শূন্যতাতেও সুখ নেই—এই দুইয়ের অদ্বয় সামরস্যেই সহজানন্দরূপ মহাসুখের উপলব্ধি। লুই বলেছেন যে, তিনি ধমন অর্থাৎ নিঃশ্বাসবাহী নাড়ী ও চমন বা প্রশ্বাসবাহী নাড়ীদ্বয়ের স্বাভাবিক নিম্নগা ধারাকে নিয়ন্ত্রিত করে অবধূতীমার্গাসীন হয়েছেন এবং সেই অবস্থায় সহজস্বরূপের যুগনদ্ধ রূপ দর্শন করেছেন।
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇
সাহায্য - মণীন্দ্রমোহন বসু ও নির্মল দাশ