Ads Area

সখি কি পুছসি অনুভব মোয়



কবিবল্লভ। অনুরাগ


সখি কি পুছসি অনুভব মোয়
সোই পিরীতি  অনুরাগ বাখানিতে
তিলে তিলে নূতন হোয়।।
জনম অবধি হাম   রূপ নেহারুলুঁ
নয়ন না তিরপিত ভেল।
লাখ লাখ যুগ   হিয়ে হিয়ে রাখলুঁ 
তবু হিয়ে জুড়ন না গেল।।
সোই মধুর বোল   শ্রবণহি শুনলুঁ 
শ্রুতি পথে পরশ ন গেল।
কত মধু যামিনী   রভসে গোড়ায়ঁলু
না বুঝলুঁ কৈছ’ন কেল।।
কত বিদগধ জন   রসে অনুমগন
অনুভব কাহুঁ ন পেখ।
কহ কবি বল্লভ   প্রাণ জুড়াইতে 
লাখে না মিলিল এক।।


সমালোচনা

আলোচ্য পদটি অনুরাগ পর্যায়ের। প্রেমের উৎকর্ষবশত যে রাগ প্রিয়কে নিত্য নতুনভাবে প্রতিক্ষণে অনুভব করায় তাই অনুরাগ। 

এই পদটিতে সে অনুরাগের অপরূপ রহস্যের ও মাধুর্য্যের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। শ্রীমতী সখীকে জানাচ্ছেন হে ‘সখী’, আমার অনুভবের কথা আর কি জিজ্ঞাসা করছ? সেই পিরীতি অনুরাগের কথা বলতে গেলে তা তিলে তিলে নতুন হয়। জন্মাবধি আমি রূপদর্শন করেছি, কিন্তু নয়ন আজও তৃপ্ত হল না। সে মধুর বাণী শ্রবণে শুনলাম, তবু শ্রুতিপথকে তো যেন স্পর্শ করলো না। অর্থাৎ কানকে যেন শুধু ছুঁয়ে গেল। আরও শুনবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা যেন বেড়েই চলল। কত বসস্ত রজনী মিলনলীলায় কাটালাম, কিন্তু প্রেম-কেলির রহস্য তো আজো বুঝতে পারলাম না। কত বিদগ্ধজন প্রেমরসে নিমজ্জিত রয়েছেন, কিন্তু কেউ অনুভব করেছেন বলে তো দেখলাম না। কবিবল্লভ বলছেন, প্রাণ জুড়াতে লাখে একজনও মিলল না।

আলোচ্য পদটি কবিবল্লভ ভণিতায় পাওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এটি বিদ্যাপতির বলেই বহু রসজ্ঞের স্থির বিশ্বাস। বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যে কবিবল্লভ নামে কোনও উল্লেখযোগ্য পদ পাওয়া যায় না, শুধু এটি ছাড়া। তাছাড়া পদটিতে ভাবের গভীরতা, বর্ণনার ঐশ্বর্য, কল্পনার দূরাভিসারী নভোযাত্রা, প্রেমের অতলস্পর্শী রহস্যের সন্ধানপর মনের আকুলতা আশ্চর্য সুন্দর ভাষা ও ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে। পদটির রচনা-বৈশিষ্ট্য কবি সার্বভৌম বিদ্যাপতির কবিত্ব ভঙ্গির কথা মনে করিয়ে দেয়। তাছাড়া বিকাশশীল প্রেমিক মনের শত কলাপের মতো বর্ণাঢ্য বিকাশ-বৈচিত্রা যেভাবে ব্যক্ততা আর কোনও কবির মধ্যে পাওয়া যায় না। তাই পদটি বিদ্যাপতির অনুমান করা চলে।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area