Ads Area

অপর্ণা চরিত্র বিসর্জন নাটক


অপর্ণা সরলা বালিকা। নাটকে প্রথম আবির্ভাবের সঙ্গে অপর্ণা পাঠক মনে ছাপ রেখে যায়। অন্তর থেকে যাকে সত্য বলে জেনেছে রজার কাছে সে তা নির্ভীকভাবে ব্যক্ত করে। অপর্ণা স্পষ্টবাদী ও দৃঢ়চেতা সেইসঙ্গে মধুর ও কোমল স্বভাবা। জয়সিংহকে সে প্রেমের আলোেক পথের সন্ধান দিয়েছে। জয়সিংহের মধ্যে দৃপ্ত ব্যক্তিত্ববোধ জেগে ওঠে। অপর্ণা জয়সিংহের জীবনে নতুন চেতনার সঞ্চার করতে সাহায্য করেছে। ছাগশিশুর জন্য অপর্ণার কান্না জয়সিংহের সংস্কারাচ্ছন্ন মনকে মুক্ত করতে সাহায্য করেছে। একটা অনাবিষ্কৃত দেশ যেন জয়সিংহ আবিষ্কার করল। স্নেহ-প্রেম-দয়ার যে অনির্বচনীয় মাধুর্য, জয়সিংহ তা আস্বাদন করল। অপর্ণার আহ্বানে তার অন্তরাত্মা প্রেমের মধ্যে জেগে উঠে, আনন্দের মধ্যে সার্থকতা খুঁজতে লাগল। তাই জয়সিংহ বলেছে--

'তোমার মন্দিরে একী নূতন সংগীত
ধ্বনিয়া উঠিল আজি হে গিরিনন্দিনী,
করুণাকাতর কণ্ঠস্বরে। ভক্তি হৃদি,
অপরূপ বেদনায় উঠিল ব্যাকুলি।'


কঠিন পাষাণ প্রতিমার পূজায় তো হৃদয় ভরে না, সে যে জগতের সৌন্দর্যের মধ্যে আনন্দের মধ্যে মানুষের স্নেহ-প্রেমের মধ্যে ছুটে যেতে চায়। সেই সৌন্দর্যের সন্ধান জয়সিংহকে অপর্ণা দিয়েছে। ক্ষুদ্র ছাগশিশুকে সন্তান স্নেহে পালন করতে গিয়ে সে আপন অস্তরের স্নেহ মমতা দ্বারা বুঝতে শিখেছে যে দেবী কখনো রক্ত পিপাসিনী হতে পারেন না। তিনি বিশ্বের জননী তিনি তো রাক্ষসী নন। জয়সিংহ বা রঘুপতির মতো অপর্ণা কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান হয় নি। সত্যকে সে অনায়াসে গ্রহণ করেছে। এজন্য কোন দ্বিধা, দ্বন্দ্ব মানসিক চাঞ্চল্য তাকে সংশয়ান্বিত করে তোলে নি।

সংস্কারাছন্ন রঘুপতিকে সে অভিশাপ দিয়েছে যে, মিথ্যার বন্ধনে সে জয়সিংহকে বেঁধে রাখতে চায় তা নিশ্চয়ই ছিন্ন হবে। আবার জয়সিংহের আত্মবিসর্জন-এর পর উন্মত্তপ্রায় রঘুপতির প্রতি সে ঘৃণা বা বিদ্বেষের ভাব প্রকাশ করে নি। বিপথগামী পুত্র বিপদে পড়লে মা যেমন তার সব দোষ ত্রুটি মার্জনা করে তাকে স্নেহের আশ্রয় দেন তেমনি সে রঘুপতিকে অন্ধ সংস্কার মিথ্যা ও হিংসার পঙ্কিল আবর্ত থেকে প্রেম, অহিংসা ও সত্যের বিরাটত্বের মধ্যে আহবান করেছে। তার প্রভাব নাটকের মধ্যে সর্বত্র। সে জয়সিংহকে প্রভাবিত করেছে। রাজার চিন্তা ও চেতনাকে উদবুদ্ধ করেছে। রাজা বলেছেন –

'এতদিন স্বপ্নে ছিনু,
আজ জাগরণ। বলিকার মূর্তি ধরে 
স্বয়ং জননী মোরে বলে গিয়েছেন
জীবরক্ত সহে না তাঁহার।


তার সমস্ত কার্য অন্তরের মধ্যে একটা ভাবের উদ্বোধন থেকে কেন্দ্রীভূত। জয়সিংহকে সমস্ত নাটক জুড়ে সে বার বার মন্দির ছেড়ে চলে আসতে বলেছে। শেষ দৃশ্যে শোকোন্মত্ত রঘুপতিকে বলেছে - 

“পিতা, এসো এ মন্দির ছেড়ে যাই মোরা, পিতা, চলে এসো।"  প্রেম ও মানবতার মধ্যে যে জীবনের সার্থকতা,  তা ইঙ্গিত দেবার জন্য যেন তার সৃষ্টি।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area