এক সে সুণ্ডিনি দুই ঘরে সান্ধঅ | বিরুবাপাদের পদ | চর্যাপদ ৩
মূলপদ
চর্যাপদ ৩
রাগ গবড়া - বিরুবাপাদানাম্
এক সে সুণ্ডিনি দুই ঘরে সান্ধঅ।
চীঅণ বাকলঅ বারুণি বান্ধঅ॥ ধ্রুব।।
সহজে থির করী বারুণি সান্ধে।
জেঁ অজরামর হোই দিঢ় কান্ধে॥ ধ্রু॥
দশমি দুআরত চিহ্ন দেখইআ।।
আইল গরাহক তাপণে বহিআ॥ ধ্রু॥
চউশঠী ঘড়িয়ে দেঢ় পসারা।
পইঠেল গরাহকা নাহি নিসারা ॥ ধ্রু॥
এক ঘড়ুলী সরুই নাল।
ভণন্তি বিরুআ থির করি চাল॥ ধ্রু॥
ভাবানুবাদ
এক সে শুণ্ডিনী দুই নিয়া ঘরে সান্ধে।
চিকণ বাকল দ্বারা বারুণীকে বান্ধে॥
সহজে করিয়া স্থির বারুণীকে সান্ধ।
অজর অমর হও লভি দৃঢ় স্কন্ধ ৷
চিহ্ন প্রমোদের দেখি দশমী দ্বারেতে।
গ্রাহক আপনি আসে বাহি সেই পথে ৷
চৌষট্টি ঘটীতে মদ প্রসারিত পাই।
অবধূতীরূপ ঘটী, সরু তার নাল।
গ্রাহক পশিয়া খায়, নিঃসরণ নাই॥
বিরুব বলিছে চিত্ত স্থির করি চাল॥
--------------------------
--------------------------
বাচ্যার্থ॥ আক্ষরিক অর্থ
১-২, এক সে শুঁড়ি-মেয়ে দুইকে নিয়ে ঘরে সাঁধায় (বা ঢোকে)। সুপারির ছালের বাখর দিয়ে মদ বাঁধে (ফেনায়)।
৩-৪, সহজে থিতিয়ে (স্থির করে) মদ গাঁজায় যাতে অজরামর ও দৃঢ়স্কন্ধ হওয়া যায়।
৫-৬, দশমী দুয়ারে চিহ্ন দেখে গ্রাহক নিজেই এসে উপস্থিত হল।
৭-৮, চৌষট্টি ঘড়ায় [মদের] ঢের (অঢেল) পসরা ; প্রবিষ্ট গ্রাহকের নিষ্ক্রমণ নেই।
৯-১০, ছোট একটি ঘড়া, নল তার সরু। বিরুআ বলেন, স্থির করে চালাও।
গূঢ়ার্থ ব্যাখ্যা ৷ আলোচনা
বৰ্তমান গানে মদ চোলাই ও বিক্রয়ের রূপকে বামগা-দক্ষিণগা নাড়ীদ্বয়কে নিঃস্বভাবীকৃত করে মধ্যমার্গে এনে মহাসুখলাভের যৌগিক সাধনপদ্ধতির কথা বর্ণিত হয়েছে।
দেহের বাম দিকে প্রজ্ঞানাড়ী, দক্ষিণ দিকে উপায়-নাড়ী ; প্রজ্ঞানাড়ীর গ্রাহকভাব ও উপায়-নাড়ীর গ্রাহ্যভাব, এদের মাঝখানে অবধূতী-নাড়ী গ্রাহ্য-গ্রাহকভাব-বর্জিত। এই অবধৃতী ইন্দ্রিয়ের অস্পৃশ্য বলে অন্যত্র ডোম্বী, চণ্ডালী বা শবরীরূপে কল্পিত, এখানে শৌণ্ডিকরমণী।
এক অবধূতীর মধ্যে দুই নাড়ী প্রবেশ করেছে অর্থাৎ গ্রাহ্য-গ্রাহকভাব বিসর্জন দিয়ে অবধূতী মার্গে প্রজ্ঞোপায়ের মিলন ঘটেছে। এই অবস্থায় অবিদ্যা-মল দূরীভূত হওয়ায় যোগীর চিত্ত এক সূক্ষ্ম (চিকণ) প্রভাস্বর শূন্যতা (বাকল)-য় পরিশুদ্ধ হয়ে মহাসুখের আনন্দে (বারুণী) বদ্ধ হয় অর্থাৎ সহজানন্দ-প্রয়াসী বোধিচিত্তের উদ্বোধন হয় এবং সাধক যোগদেহ ( দৃঢ়স্কন্ধ) লাভ করে জরামরণের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন।
মহাসুখচক্রের প্রবেশ দ্বারে মহাসুখপ্রমোদের চিহ্ন দেখে বোধিচিত্ত তা-নিজেই উপভোগ করার জন্য উপস্থিত হল এবং চতুর্দিকে আনন্দের উপকরণ দেখে মহাসুখে বিভোর হল। অবধূতী হচ্ছে মদের ঘটী, অর্থাৎ অবধূতী মার্গে সাধনা করলেই মহাসুখামৃতের সন্ধান মেলে। মহাসুখ সংঘটন করে বলেই অবধূতী ঘটী এবং গ্রাহ্য-গ্রাহক দ্বৈতাভাসবর্জিত বলে অবধূতী সরু বা সূক্ষ্ম। বিরুআর উপদেশ, এই সূক্ষ্ম অবধূতী মার্গেই বোধিচিত্তকে স্থিরভাবে চালনা কর।
---------------------------------
----------------------------------
আমাদের টেলিগ্রাম ও ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হোন
👇👇👇👇