এ সখি হামারি দুঃখের নাহি ওর।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মাের ।।
ঝম্পি ঘন গর- জন্তি সস্তুতি
ভুবন ভরি বরিখন্তিয়া।।
কান্ত পাহুন কাম দারুণ
সখনে খর শর হন্তিয়া।।
কুলিশ কত শত পাত মােদিত
ময়ূর নাচত মাতিয়া।
মত্ত দাদুরী ডাকে ডাহুকী
কাটি যাওয়ত ছাতিয়া।।
তিমির দিগভরি ঘোর যামিনী
অথির বিজুরিক পাঁতিয়া।
বিদ্যাপতি কহ কৈছে গােঙায়বি
হরি বিনে দিন রাতিয়া।।
আলােচনা :
বিদ্যাপতি রচিত পদটি মাথুর বিরহের। কৃষ্ণ দূর দেশে গেছেন। প্রিয় মিলনের আনন্দ বঞ্চিতা শ্রীমতীর সুতীব্র হয়েছে। শ্রীরাধার আজ দুঃখের সীমা নেই। এখন ভরা বাদল। ভাদ্র মাস। অথচ শ্রীরাধার মন্দির শূন্য। প্রচণ্ড গর্জন করতে করতে অবিরত মেঘ বর্ষণের দ্বারা সারা পৃথিবী ভাসিয়ে দিচ্ছে। কতশত বজ্রপাত হচ্ছে। তাতে আনন্দ -চিত্ত ময়ূর নৃত্য রত। দাদুরীও (ব্যাঙ) মত্ত। কামদেবের শরাঘাতে শ্রীরাধা যন্ত্রণাকাতর। সারা পৃথিবীতে ঘন অন্ধকারের আবরণ-- তার মাঝে অস্থির বিজুরির অজস্র মালা। এরূপ পরিবেশে পরাণপ্রিয় হরি বিনা শ্রীরাধা কীভাবে নিশি যাপন করবেন।
বস্তুত, প্রকৃতি ও মানবমন এখানে একাত্ম হয়ে গেছে। বর্ষণ মন্দ্রিত প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে অজস্ত্র বজ্রপাতে আমােদিত ময়ূরের নৃত্যচঞ্চলতা, দাদুরীর মত্ততা, ডাহুকীর বুক ফাটা আহবান, বিজলির অসংখ্য উদ্ভাস। প্রিয় মিলনের এটাই তাে প্রকৃত সময়। অথচ শ্রীরাধা শয়নমন্দিরে কামনা থরো থরাে মন নিয়ে নিঃসঙ্গ রজনী কাটান। আলােচ্য পদটিতে শ্রীরাধার কামনাতপ্ত মনের আকুলতা, বিচ্ছেদ বেদনার নিবিড়তা শতধা হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বর্ষণমুখর প্রকৃতির অনুপম চিত্রকল্প, বিরহতপ্ত হৃদয়ের নিবিড় বেদনার অনুষঙ্গরূপে অপরূপ সাযুজ্যলাভ করেছে। যা এ পদটি অনেকেই রায়শেখরের রচনা বলে অনুমান করলেও এটি নিঃসন্দেহে বিদ্যাপতির রচনা।
-------------------------------------------------